Mortuza Ahmmed

প্রেম সম্পর্কে আমার ব্যক্তিগত ধারণা

Published: 2024-04-03

প্রেম বা কল্পনাপ্রবণ ভালোবাসা হলো ভালোবাসার অনুভূতি বা অন্য ব্যক্তির প্রতি তীব্র আকর্ষণ আর সেই সামগ্রিক অনুভূতি এবং আবেগ প্রকাশ করার জন্য ফলস্বরূপ একজন ব্যক্তির দ্বারা গৃহীত প্রণয় আচরণ । প্রেম জিনিসটা ঘুরেফিরে সবার জীবনেই কমবেশি আসে। বলা হয়, 'হৃদয় আছে যার সেই তো ভালোবাসে, প্রেম সবার জীবনেই আসে।' যখন যেভাবেই আসুক, যতবারই আসুক, প্রথম প্রেম একটা সুন্দর অনুভূতির নাম। বেশির ভাগ অভিজ্ঞতা বলে, প্রথম প্রেম টেকে না। আবার অনেকের ক্ষেত্রে প্রথম প্রেমেই বিয়ে, বিয়ের পর সুখী সংসার। অনেকে সংসার জীবনে যাওয়ার পর বলেন, না আরেকটু ভেবে বিয়ে করা উচিত ছিল। আবার অধিকাংশের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় বা আরও পরের প্রেম একটি সুখী দাম্পত্য জীবন এনে দেয়। আবার অনেকে প্রথম প্রেমে ধাক্কা খাওয়ার পর দ্বিতীয় সম্পর্কে জড়ান মানসিক সুস্থতার জন্য। সেখানেও সুখী থাকলেও প্রথম প্রেমকে মনে মনে লালন করেন গভীর মমতায়। অনেকে ঘুরে ফিরে প্রথম প্রেমের মানুষের কাছে ফিরে আসেন, পূর্বের তিক্ততা ভুলে, একটা ভালো সম্পর্ক তৈরি করেন নিজেদের মধ্যে। আবার অনেকের এই ফিরে আসার অভিজ্ঞতা আগের থেকেও তিক্ত হয়।

প্রেম মানুষের অন্তরের একটি বিশেষ অবস্থার নাম, যা কারো প্রতি আবেগ, গভীর অনুভূতির সংমিশ্রণে সৃষ্টি হয়। কিন্তু বর্তমানে প্রেম বলতে যা প্রচলিত হয়ে গেছে, তা নিছক একটি অবৈধ সম্পর্ক। যে সম্পর্ক মানুষকে পাপের অতল সমুদ্রে ডুবিয়ে দেয়। ইতালির পিজাতে একটি গবেষণায় দেখা গেছে, প্রথম প্রেম সত্যিই ব্যক্তির ভাবনার পরিবর্তন ঘটায়। পিজা বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডোনাটেলা মারাজ্জিতি ২০ জন সদ্য প্রেমে পড়া যুগলের ওপর একটি গবেষণা চালান। এই গবেষণায় তিনি যাদের সম্পর্কের বয়স ছয় মাসেরও কম, তাদের আহ্বান জানান। গবেষণায় তিনি দেখতে চেয়েছেন যে সারাক্ষণ ভালোবাসার মানুষটির কথা ভাবার ফলে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা কেমন হতে পারে। গবেষণায় মারাজ্জিতি ছেলে-মেয়েদের রক্ত পরীক্ষা করে দেখেছেন, সদ্য প্রেমে পড়া তরুণ-তরুণীদের ও নেশাগ্রস্ত ব্যক্তির রক্তের সেরোটোনিনের পরিমাণ একই মাত্রায় রয়েছে। মানুষ যখন প্রেমে পড়ে, তখন সে তার মনের মানুষকে না দেখে থাকতে পারে না। সে দূরে থাকলেও কমপক্ষে তার ছবি দেখে, অথবা তার সঙ্গে ফোনে কথা বলে, কমপক্ষে তাকে নিয়ে স্বপ্নের বাসরে হারিয়ে যায় । কারো প্রতি সত্যিই দুর্বলতা চলে এলে, পারিবারিকভাবে তাকে বিয়ে করে নেওয়া উচিত। বিয়ে করার দৃঢ় সংকল্প থাকলেও কোনো বেগানা নারীর সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা হারাম। আর বেশির ভাগ প্রেমের শেষ পরিণতিই হয় বিচ্ছেদ, ধোঁকা। এটি শয়তানের মরীচিকা।

চলুন দেখে নেওয়া যাক আজকের যুগের প্রেমের প্রকারভেদঃ

১। প্রথম দেখায় প্রেম-

প্রথম দেখাতেই এই ধরনের প্রেমের সূত্রপাত। এ ধরনের প্রেম অনেক ক্ষেত্রেই একতরফা হয়। ছেলেদের ক্ষেত্রে এ ধরনের প্রেম বেশি দেখা যায়। এ ধরনের প্রেমে প্রায় অবধারিতভাবেই তৃতীয় পক্ষের সাহায্যের দরকার পড়ে। এ ধরনের প্রেমের সূত্রপাতে রূপ স্মরণীয় ও দৈহিক সৌন্দর্যের ভূমিকাই বেশি।

২। বন্ধুত্ব থেকে প্রেম-

এই ধরনের প্রেমের ক্ষেত্রে প্রেমিক ও প্রেমিকা দু’জনেই প্রথমে বন্ধু থাকে। তবে এধরনের প্রেম অনেক সময়ই অকালে ঝরে যায় কোন একতরফা সিদ্ধান্ত বা পারস্পরিক বোঝাপড়ার মাধ্যমে। অনেকে বন্ধুত্বের এই রূপান্তর মেনে নিতে পারেনা বলে অনুশোচনায় ভোগে। বিশেষত মেয়েরা।

৩। বিবাহোত্তর প্রেম-

এই প্রেম শুধুমাত্র স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে দেখা যায়। বিয়ের ঠিক পর পর প্রথম কয়েক মাস এই প্রেম প্রবল থাকে। বিবাহোত্তর প্রেম ফলাতে হানিমুনের জুড়ি নেই।

৪। পরকীয়া প্রেম-

বিয়ের পর স্বামী বা স্ত্রী ব্যতীত অন্য কোন পুরুষ বা মহিলার সঙ্গে প্রেমকেই পরকীয়া প্রেম বলে। এই পরকীয়া প্রেমতো আদিযুগ থেকে চলে আসছে।

৫। অপরিণত প্রেম-

এ ধরনের প্রেম সাধারণত স্কুলে পড়ুয়া অবস্থায় হয়ে থাকে। মেয়েরাই এ ধরনের প্রেমে বেশি পড়ে। তবে ছেলেরাও যে পড়ে না তা বলা ভুল হবে। প্রেমিক প্রেমিকাদের দু’জনই সমবয়সী হতে পারে।

৬। কর্মক্ষেত্রে প্রেম-

কর্মসূত্রে দু’জন মানুষের পরিচয়ের মাধ্যমে এ ধরনের প্রেম গড়ে ওঠে। বেসরকারী সংস্থাতে এ ধরনের প্রেম বেশি দেখা যায়।

৭। মোবাইল প্রেম-

বন্ধুর কাছ থেকে চেয়ে নিয়ে বা ফোনবুক থেকে চুরি করে, পাড়ার ফোনের দোকান থেকে সংগ্রহ করে, অন্য কোন সূত্র থেকে নাস্বার পেয়ে বা নিতান্তই মনের মাধুরী মিশিয়ে কোন নাম্বার বানিয়ে তাতে ফোন করে কোন মেয়ের সাথে সংযোগ স্থাপনের মাধ্যমে এই ধরনের প্রেমের সূত্রপাত।

৮। ইন্টারনেটে প্রেম-

ইন্টারনেটে চ্যাটিংয়ে বা সোশ্যাল মিডিয়াতে প্রেম এটা এখন হামেশাই হচ্ছে। দু’জনের পরিচয়ের মধ্য দিয়ে এ ধরনের প্রেমের সূত্রপাত। এ ধরনের প্রেমে উভয়পক্ষেরই ফাঁকি দেয়ার সুযোগ থাকে অনেক।

৯। ত্রিভুজ প্রেম-

এ ধরনের প্রেমকে বলা যেতে পারে একজন মেয়েকে নিয়ে দু’জন ছেলের দড়ি টানাটানি। একই মেয়ের প্রতি দু’জন ছেলের ভালোবাসা এই প্রেমের মূলকথা। উক্ত মেয়েকে পেতে দু’জন ছেলেই পাওয়ার জন্যে মরিয়া হয়ে থাকে।

১০। বহুভুজ প্রেম-

একই মেয়ে বা ছেলের প্রতি দু’এর অধিক ব্যাক্তির অনুরাগই মূলত, বহুভুজ প্রেম। এক্ষেত্রে উক্ত মেয়ে বা ছেলেটি স্বভাবতই দৃষ্টিকাড়া সৌন্দর্যের অধিকারী হয়ে থাকেন। সবাই তার সাথে প্রেম করতে চায় এই বিষয়টি তাকে ব্যাপক আনন্দ দেয়।

১১। ঘানি টানা প্রেম-

প্রেমিক বা প্রেমিকার কাছ থেকে কোন বিশেষ সুবিধা লাভই এ ধরনের প্রেমের উদ্দেশ্য। মেয়েদের মধ্যে এ ধরনের প্রেমের প্রচলন বেশি দেখা গেলেও ছেলেদেরকেও মাঝে মাঝে করতে দেখা যায়।

১২। অব্যক্ত প্রেম-

নীরবে এক অপরকে ভালোবেসে গেলেও পরিস্থিতি, সময় বা মনোবলের অভাবে প্রেমিক বা প্রেমিকার মধ্যে কেউই একে অপরকে কোনোদিন বলেনি। অব্যক্ত প্রেম হারানোর বেদনা খুব কষ্টদায়ক, জীবনের অন্যতম বড় ভুল হিসেবে মনে থাকে।

১৩। সুপ্ত প্রেম-

একে অপরকে ভালোবাসে কিন্তু কেউই কাউকে বলছে না, পুরো ব্যাপারটাই লুকিয়ে যাচ্ছে এমন প্রেমই সুপ্ত প্রেম। সুপ্ত প্রেম আজীবন সুপ্ত থেকে গেলে তা পরিণত হয় অব্যক্ত প্রেমে।

১৪। চুক্তিবদ্ধ প্রেম-

এ ধরনের প্রেম হয় পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে। সাধারণ অর্থে প্রেম বলতে যা বোঝায় তা এই ধরনের প্রেমে অনুপস্থিত থাকে। কোন ভবিষ্যৎ থাকেনা এসব সম্পর্কের।

১৫। অসাম্প্রদায়িক প্রেম-

এ ধরনের প্রেমের ক্ষেত্রে ছেলে ও মেয়ে দু’জনে দুই ধর্ম বা সম্প্রদায়ের অনুসারী হয়ে থাকে। সমাজ এ ধরনের সম্পর্ককে সমর্থন করেনা। বিশেষত, হিন্দু-মুসলমান ছেলে-মেয়ের মধ্যে প্রেম বেশি বিতর্কের সৃষ্টি করে।

১৬। ভাড়াটে প্রেম-

এ ধরনের প্রেমের প্রেমিক বা প্রেমিকারা বলতে গেলে ভাড়া খাটে। তারা সকালে একজনের গার্লফ্রেন্ড তো বিকেলে আরেকজনের। কোন নির্দিষ্ট ঠিক ঠিকানা নেই। ব্যাপারটা অনেকটা মাসে মাসে মোবাইল হ্যান্ডসেট চেঞ্জ করার মতো।

১৭। ঝগড়াটে প্রেম-

সারাক্ষণ দু’জনের মধ্যে খিটির-পিটির লেগে থাকাটা এই প্রেমের বৈশিষ্ট্য এ ধরনের প্রেমে ঝগড়াগুলো ক্ষণস্থায়ী হয়, কিন্তু খুব ঘনঘন হয়। ঝগড়াগুলো অধিকাংশই হয় ফোনে।

১৮। ‘আজো তোমায় ভালোবাসি’ প্রেম-

এই প্রেমে প্রেমিক-প্রেমিকার বিচ্ছেদ ঘটেছে আগেই। তবুও আজো তারা একে অপরকে ভালোবাসেন। হাই হুতাশ আর চোখের পানিতেই কেটে গেলো এই প্রেম।

১৯। ব্যর্থ প্রেম-

সবশেষে আছে ব্যর্থ প্রেম। এ প্রেম শুরু হবার আগেই শেষ হয়ে যায়। ব্যর্থ প্রেমিকার চাইতে ব্যর্থ প্রেমিকের সংখ্যা কয়েক গুণ বেশি। ব্যর্থ প্রেমের শেষটা হয় প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান দিয়ে। কখনো কখনো ছেলেদের ভাগ্যে জোটে থাপ্পড়, মেয়েদের জুতার বাড়ি আবার কখনও উধুম গণধোলাই।

Thanks for reading. Feel free to send comments, questions, or recommendations to mortuzaahmmed@aol.com.