আমার এখনও সেদিনের কথা মনে আছে যখন প্রথম মোবাইলফোন হাতে নিয়েছিলাম। সে মোবাইলফোন ছিল নোকিয়া ১২০০ মডেলের। তখন মোবাইলফোনের মাধ্যমে বার্তা,কল আদান-প্রদান ও ছোট ছোট গেম খেলা যেত। আর মিউজিক হিসেবে ছিল নোকিয়ার বিখ্যাত সব রিংটনগুলো। আহ! মনে হলেই যেন শৈশবের অনুভূতি জাগায়। আর মোবাইলের বাটনগুলোতো এখনও মস্তিষ্কের মধ্যে গেথে আছে। সেই মোবাইল দিয়ে সবাইকে মেসেজ পাঠাতাম। আর এমএমএসগুলো আমার কাছে আলাদা অনুভূতি জাগাতো। আস্তে আস্তে এসব মোবাইলফোনের বিলুপ্তি ঘটতে থাকে। কালের বিবর্তনে হারিয়ে যেতে থাকে। আসতে থাকে নতুন সব স্মার্টফোন। ধীরে ধীরে বাজারে স্মার্টফোনের আধিপত্য বাড়তে থাকে। প্রথম স্মার্টফোনের সান্নিধ্যে আসি এক বন্ধুর হাত ধরে। তার প্রথম স্মার্টফোন ছিল SYMPHONY W15 । সেখানেই ANDROID এর সাথে পরিচয়।
সে তার স্মার্টফোনে আমাকে ফেসবুকের সাথে পরিচয় করে দেয়। ফেসবুকের সাথে পরিচিত হবার আগে আমি কোনদিন এর নামও শুনিনি। এটি খায় নাকি গায়ে মাখে? আমার মনে প্রশ্নের উদ্ভব হয়। তাকে প্রশ্ন করতে থাকি এসবের সমন্ধে। সে আমাকে উত্তর শুনিয়ে দেয়। যদিও বেশিরভাগ উত্তরই আমার মাথার উপর দিয়ে যায়। সে বলে ফেসবুক এমন একটি ওয়েবসাইট যেটির মাধ্যমে অনলাইনে বন্ধু বানানো যায়। যাই হোক এভাবে আমি স্মার্টফোন সম্পর্কে ধারণা পেয়ে থাকি। যখন আমার হাতে প্রথম নিজস্ব স্মার্টফোন আসে তখন এর সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পারি। আসলে আমি এমন জেনারেশন যাকে "বিটিভি" জেনারেশন বললে ভুল হবে না। হা হা । তবে স্মার্টফোনের ব্যবহার করতে করতে এক পর্যায়ে আমার অবসাদ চলে আসে। চোখে পড়তে থাকে এর ক্ষতিকর দিকগুলো। বুঝতে পারি যে, যতই স্মার্টফোন প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটাক না কেন এর দ্বারা সবচেয়ে ক্ষতির বেশি সম্মুখীন হচ্ছে যুবসমাজ। এদের বেশিরভাগই এখন ফোনে বুদ হয়ে থাকে। খাওয়া নেই, পড়া নেই, ঘুম নেই যখন তখন এরা এর ব্যবহার করে। আরে তোমরা যদি দিনের বেশিরভাগ সময় এই স্মার্টফোন নামের বাক্সে ব্যয় কর, তাহলে জীবনে বড় হবার স্বপ্ন কখন দেখবে? আবার তাদের এক শ্রেণি যাদের 'প্রেমিক শ্রেণি' নামে আখ্যায়িত করা হয়, তারা তো তাদের বাবুরা খাইছে নাকি খায়নি এসব করতে করতে রাতের অর্ধেকের বেশি সময় ব্যয় করে দেয়। হায়রে প্রেম রে! সালা তোদের পরীক্ষার রেজাল্টের কী অবস্থা হবে একবার ভেবে দেখেছিস? যখন তোদের পোকা ঠাণ্ডা হবে তখন বুঝতে পারবি।
এ তো গেলো কয়েকটি ক্ষতিকর দিক। আরও যে কত ক্ষতিকর দিক আছে বলে শেষ করা যাবে না। দেশের সরকার জনগণদের উপর নজরদারি করার জন্য বিভিন্ন ম্যালওয়্যার প্রি-ইন্সটল করে দিচ্ছে স্মার্টফোনে। স্মার্টফোনের access নিয়ে রাখছে। আর গুগল বাবা তো সব নিয়ন্ত্রণ করছেই। এক ব্যক্তি যতটা না নিজের সমন্ধে জানে, তার চেয়ে বেশি তার সমন্ধে জানে গুগল বাবা। ব্যক্তি কী সার্চ করলো, কী দেখলো সবকিছুর এক্সেস তাদের হাতে। তারা যেভাবে নাচাচ্ছে সে ভাবে নাচছে গ্রাহক। কী এক অদ্ভুত পরিস্থিতি তাই নয় কি? আর কিছু কিছু টোকাই পোলাপাইন I-Phone এর এত বেশি পাগল হয়ে থাকে যে, সব জায়গাতে তারা অন্য সকল ফোনের সাথে I-Phoneএর তুলনা করতে চায়।
আমার ভাষার জন্য আমি দুঃখিত। না বলে পারছিও না। টিকটক, ফেসবুক, স্ন্যাপচ্যাট ও ইউটিউবকেই তারা বেশিরভাগ সময় ব্যবহার করছে ইন্টারনেট হিসেবে। এর বাইরেও যে একটি দুনিয়া আছে তা তাদের দৃষ্টিগোচর হচ্ছে না। ইন্টারনেট কী এসব করার জন্য তৈরি হয়েছিল? কিছু প্রশ্ন মাথার মধ্যে রয়েই যায়। ধরা যাক আমি একটি নতুন স্মার্টফোন কিনলাম । ফোনটি Android । সেটিকে চালু করতে হলে আমাকে E-mail হিসেবে G-Mail খুলতে হবে বাধ্যতামূলকভাবে। তাদের Terms & Conditions এ ক্লিক করতে হবে। সেটি এমনভাবে তৈরি যেটি পড়ার ধৈর্য থাকে না। বাধ্যতামূলকভাবে ক্লিক দিতে হবে তাতে। হ্যাঁ, এর পরেই হবে আসল খেলা শুরু । গুগল তার কর্তৃত্ব শুরু করে দিবে। আমার ফোন আর আমার থাকলো কই? সবকিছুতেই তাদের হস্তক্ষেপ করা স্টার্ট হবে। প্রাইভেসি আস্তে আস্তে নষ্ট হবে। খালি গুগল নয়, যে কোম্পানী ফোনটি তৈরি করেছে তারা তো অযথা সব অ্যাডওয়্যার দিয়ে ভরে রাখবে । ফোন চাইনিজ হলে তো আবার কিছু গেইম আগে থেকেই ইন্সটল করা থাকে। কিছু অ্যাপস তো চাইলেও ডিলিট করা যায় না। অযথা স্টোরেজ ভরে রাখে। আর আইফোন কিনলে তাদের Terms & Conditions আলাদা। সেগুলো জোর গলায় বলে যে তারা পৃথিবীর সবচেয়ে সিকিউর ফোন। হা হা । তারাও ধোয়া তুলসী পাতা না। তারাও গ্রাহকদের ডেটার এক্সেস নিয়ে রাখে। সরকার চাইলেই তারাও দিতে বাধ্য।
এতকিছুর পরে আমার আর স্মার্টফোন ব্যবহার করতে ইচ্ছা করে না। তাই করিও না। ইন্টারনেট ব্যবহার করতে হলে আমার কম্পিউটারে করি। সেখানে আমার কাস্টোমাইজ অপারেটিং সিস্টেম ব্যবহার করি। আর মোবাইল হিসেবে স্মার্টফোন ব্যবহার করতে চাইলে স্মার্টফোনে Graphene OS ব্যবহার করার ইচ্ছা আছে। আপনারা তাই যত সম্ভব পারেন স্মার্টফোনের ব্যবহার কমিয়ে দিন। এটি প্রাইভেসির জন্য ক্ষতিকর। কম্পিউটার ব্যবহার করুন । এবং তাতে Linuxএর কোন এক distribution ব্যবহার করুন। ভালো থাকুন। নিরাপত্তা বজায় রাখুন আপনার ও জনগণের হোক সেটি রিয়েল ওয়ার্ল্ড অথবা ডিজিটাল ওয়ার্ল্ড।
Thanks for reading. Feel free to send comments, questions, or recommendations to mortuzaahmmed@aol.com.